Healty heart happy feet

Healthy Heart Happy Life Organization (HeLO)

হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো)

Charity, Awareness & Research For Humanity

Tips Details

করোনায় করণীয়


বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এ পর্যম্ত মাত্র ২ লক্ষ টেষ্ট হয়েছে, ৩০ হাজারের বেশী করোনা পজেটিভ এসেছে। সেই হিসেবে দেশে ১৭ ভাগ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় মৃত্যু সরকারী হিসেবে ৫০০ ছুই ছুই। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমার ধারনা জুনের মাঝামাঝি বাংলাদেশে করোনা প্রকোপ নিম্নগামী হবে। এতদিনে কত প্রাণহানি হয় সেটাই দুশ্চিন্তার কারন। তাই দয়া করে সবাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। যেখানে এই বছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ্বে যেতে পারছেন না, ঈদ কিভাবে হবে একটু সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে দেখুন। বেচে থাকলে অনেক ঈদ আমরা জাঁকজমকভাবে করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

 

∗ সবসময় ভেবে নিন, আপনি অথবা আপনার পাশের লোকটি করোনা পজেটিভ। কারন, ৫০-৬০ ভাগ করোনা পজেটিভদের উপসর্গ থাকছে না। এটা করোনা ছড়িয়ে পড়ার উল্লেখযোগ্য কারন। তাই আপনি -আমি সবাই মাস্ক ব্যবহার করবো। চিকিৎসক ছাড়া বাকীরা পাতলা সুতি কাপড়ের পরিষ্কার মাস্ক ব্যবহার করবে। ৩ টি মাস্ক বাসায় রাখুন, একটা ধুয়ে অন্যটা ব্যবহার করুন। বাসা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ৬ ফুট দুরত্বে থাকার চেষ্টা করুন। কমপক্ষে ৩ ফুট তো অবশ্যই।

∗ আপনি জরুরি প্রয়োজনে বাসার বাইরে গেলে মাস্ক পড়ে বের হবেন, ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখবেন। গণপরিবহনে উঠবেন না, হাটার অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে রিক্সা অথবা সাইকেল ব্যবহার করুন। ৬০ বছর বয়সের বেশি অথবা যে কোন বয়সের হার্ট, কিডনী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এজমা ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন তারা কোন ভাবেই বাসা থেকে বের হবেন না।

∗ বাসায় ফিরে সরাসরি বাথরুমে যান, কাপড় খুলে গোসল করে ঘরের অন্য সদস্যের রুমে প্রবেশ করুন।

∗ ধুমপান করবেন না। প্রচুর পানি, ফলমুল, শাকসবজি, ডিম খাবেন। ৭- ৮ ঘন্টা ঘুমাবেন। পরিবারকে সময় দিন। আপনার নিজের ভিতরের সৃজনশীলতা খুজুন আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে বাসায় সময় কাটান। রোগ প্রতিরোধ বাড়ায় কিছু ঔষধ খাওয়া যেতে পারে যেমন ভিটামিন সি ( Tab Ceevit), ভিটামিন ডি ( Cap D Rise 20000/ 40000 unit) সপ্তাহে ২ টা করে ২ মাস, জিংক ( Tab Xinc) ২ টা করে ২ মাস, ভিটামিন এ ( Cap Retinol Forte 50000 unit) ১ টা করে পর পর ৪ দিন - ৬ মাসে ১ কোর্স খেতে পারেন।

∗ আপনার ও পরিবারের কারো করোনা পজেটিভ হয়ে গেলে ঘাবড়াবেন না। ৫০-৬০ ভাগ রুগীদের কোন উপসর্গ থাকে না। ৩০- ৪০ ভাগের অল্প ও মধ্যমমানের উপসর্গ থাকে যেমন - জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা, খাবারের অরুচি, নাকে গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি। এই পর্যায়ে আক্রান্ত রুগী নিজের বাড়িতে সম্পুর্ণ আইসোলনে থাকবেন। কোনভাবেই বাড়ির অন্যান্য সদস্যের সামনে আসবেন না। খাওয়া দাওয়া, বাথরুম ইত্যাদি সবকিছু আলাদাভাবে করবেন। যদি বাসায় কমন বাথরুম থাকে, সেটাকে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধোয়ার পর অন্যরা ব্যবহার করবেন। রুগীসহ অন্যরাও মাস্ক ব্যবহার করবেন, এতে সংক্রমনের হার কমে যাবে। যেহেতু রুগি সবসময় একা থাকেন, তাই মানষিক শক্তি খুব জরুরী। তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সবাইকে যোগাযোগ রেখে সাহস দিতে হবে।

∗ অল্প ও মধ্যম উপসর্গে চিকিৎসা তেমন কিছু নেই, শুধু উপসর্গ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। যেমন জ্বর আর শরীর ব্যাথায় প্যারাসিটামল (Tab Napa), সর্দি - কাশিতে এন্টি হিস্টামিন (Tab Deslor), ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের পরামর্শমত Cap Doxicap 100 mg ২টা একসাথে তারপর সকালে ও রাতে ১ টা করে ৭ দিন খেতে হবে। Tab Ivermactin ( Scabo 6 mg), ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে ৩ টা আর কম হলে ২ টা ঔষধ শুধুমাত্র ১ বার খাবেন। তবে প্রতিটি ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শে খাবেন। যেমন যারা Tab Warfarin খান তার Tab Ivermactin খাবেন না কারন রক্তক্ষরন হতে পারে। চিকিৎসকদের চেম্বার আর হাসপাতালে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া যাবেন না, টেলিমিডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ নিবেন।

∗ করোনা পজেটিভ রুগী কখন হাসপাতালে যাবেন? আপনার বাসায় যদি Pulse oxymetry থাকে তাহলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা জানা সহজ, যদি ৯০ এর নীচে নেমে যেতে থাকে দেরী না করে হাসপাতালে যাবেন। আর Pulse oxymetry না থাকলে যদি শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে, আপনার নিজস্ব স্বাভাবিক কাজ যেমন কথা বলতে, বাথরুমে যেতে কষ্ট হয় তাহলে হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধুমপায়ী, হার্ট, কিডনী রুগী যে কোন বয়সী হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। হাসপাতালে রুগীর চাপ বেড়ে গেছে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মত বাসায় অক্সিজেন দিতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমত Inj Enoxaparine 40 mg নাভীর পাশে চামড়ার নীচে দেওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে Dengue test ও Platelet count দেখে নেয়া ভাল।

∗ কিন্তু ৫-১০ ভাগ করোনা পজেটিভ রুগীদের আসলেই ভাগ্য খুব খারাপ। কেউ কেউ অল্প ও মধ্যম উপসর্গ থেকে খুব খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে। আবার কিছু রুগী হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাদেরকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। Concentrated oxygen নিজেরা ব্যবস্থা করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। তবে যতটা সম্ভব ভেন্টিলেটর ছাড়াই চিকিৎসা করা উত্তম। সঠিক ফলোআপ, নিয়মিত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, Anti Viral drugs, Inj Enoxaparine 80 mg, Plasma therapy ব্যবস্থার সাথে সাথে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানবিক ব্যবহার ও আল্লাহের কৃপায় রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরতে পারেন।

∗ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন করোনার ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা। তাদেরকে সব রুগীদের করোনা পজেটিভ ধরে নিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মানবিক আচরন দিয়ে চিকিৎসা সকলের চিকিৎসা করতে হবে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও জনগণকে এই ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বুঝতে হবে উনারাও মানুষ, তাদেরও পরিবার পরিজন আছে। তারা সবাই করোনা ঝুকি নিয়ে জনগনের সেবায় হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তাদেরকে সন্মান করুন, নিজে বাচুন।

করোনা বায়ুবাহিত ছোয়াচে রোগ। তবে করোনা রুগী অচ্ছুৎ নয়, তাদেরকে অসন্মান করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি আমি সবাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারি। অতএব করোনা রুগী ও তাদের পরিবারের সাথে মানবিক আচরন করি। করোনা রুগী মারা গেলে তার সৎকারের ব্যবস্থা করি। ইতিহাসে মানুষের জয় হয়েছে সবসময়, আশা এবারও করোনাকে জয় করবে মানবজাতি। ততদিন শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে সাবধানে সব নিয়ম মেনে চলি।

লেখক - ডাঃ মহসীন আহমদ (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)

সহযোগী অধ্যাপক
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক, হেলদি হার্ট হেপী লাইফ অর্গানাইজেশন।