হেলো স্বাস্থ্য টিপসঃ ২
আগের পর্বে যেমন বলেছি হার্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশসমুহঃ
১. রক্তনালী
২. মাংশপিণ্ড
৩. ভালব
৪. পেসমেকার
৫. দেয়াল/ পার্টিশন
গুরুত্তপূর্ণ অংশ সমুহের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে সবার বুঝতে সুবিধা হবে।
হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হলেই আমাদের কাছে পরিচিত হার্ট এটাক হয়।
হার্ট এটাক কি? কেন হয়?
হার্টের ( হৃদপিণ্ড) নিজস্ব রক্তনালী বন্ধ হয়ে হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে হার্টের মাংসপিন্ড নষ্ট হয়ে যাওয়াকে সহজ ভাষায় হার্ট এটাক বলে।
হার্ট এটাক ( Ischemic heart disease) প্রকারভেদঃ
১. স্থিতিশীল ব্যথা (Stable angina)
এটা মুলতঃ রক্তনালীর ব্লকের প্রথম ও হার্ট এটাকের পুর্ববর্তী লক্ষন। এক্ষেত্রে রক্তনালী ব্লক স্থিতিশীল থাকে, শুধুমাত্র ব্লকের কারণে বিশ্রামের সময় হার্টে স্বাভাবিক রক্ত সাপ্লাই হয় কিন্তু যখন ডিমান্ড বাড়লে সাপ্লাই কমে যায়। তাই বিশ্রামে থাকা অবস্থায় রুগী বুকে চাপ/ ব্যাথা অনুভব করে না কিন্তু পরিশ্রম করলে কিংবা জোরে হাটলে বুকে ব্যাথা / চাপ/ শ্বাসকষ্ট হয়। কোন রুগীর হাটা অবস্থায় কিংবা পরিশ্রমের সময় বুকে চাপ/ ব্যাথা হলে আর বিশ্রাম নিলে ঐ চাপ/ ব্যাথা কমে গেলে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিবেন। এ পর্যায়ে রুগী নিয়মিত চিকিৎসা করলে হার্ট এটাক থেকে বেচে যাবেন।
২. অস্থিতিশীল ব্যাথা (Unstable Angina)
রুগী বিশ্রাম অবস্থায় প্রচন্ড বুকে চাপ/ ব্যাথা অনুভব করবে, প্রচুর ঘাম ও বমি হতে পারে। রক্তের স্থিতিশীল ব্লক ফেটে গিয়ে সাধারণত অস্থিতিশীল ব্যাথার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে অন্যথায় রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হার্টের মাংশপিন্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমনকি মৃত্যু হতে পারে।
৩. মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন ( Myocardial Infarction)
এটা সবচাইতে খারাপ ধরনের হার্ট এটাক, ব্লক যদি কোন কারনে ফেটে গিয়ে রক্তনালী ১০০% বন্ধ করে দেয় তাহলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। রুগী বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে সাথে ঘাম, বমি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে এমনকি সাথে সাথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারাও যেতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব হাসাপাতালে নিয়ে ১০০% ব্লক খুলতে হবে৷ প্রতি মিনিট এখানে মুল্যবান, যত দেরী হবে ততই মাংসপিণ্ড নষ্ট হতে থাকবে। ১০০% ব্লক খুলার উপায় ২টি, ১ টি হলো Streptokinase ইঞ্জেকশন ( আরো উন্নত Thrombolytics দেশের বাইরে আছে) দিয়ে ৫০-৬০% সুযোগ আছে ব্লক পরিষ্কার করার আর দ্বিতীয়টি হলো প্রাইমারি পি সি আই (Primary PCI) যা অত্যন্ত আধুনিক ও ১০০% কার্যকরী। সর্ব্বোচ্চ ১২ ঘন্টার মধ্যে সরাসরি ক্যাথল্যাবে নিয়ে এঞ্জিওগ্রাম করে ব্লক পরিষ্কার করে ষ্ট্যান্টিং করে দেয়াকে প্রাইমারি পি সি আই বলে। আমাদের আর্থিক সমস্যা, হেলথ ইন্সুইরেন্স না থাকা, সারা দেশে করোনারী কেয়ার ইউনিটের অভাব, দক্ষ জনশক্তি অভাব, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি সমস্যার জন্য প্রাইমারী পি সি আই বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে। ইঞ্জেকশন হোক আর প্রাইমারী পি সি আই হোক সবক্ষেত্রেই রোগীকে ১২ ঘন্টায় মধ্যে হাসপাতালে আসতে হবে, আরো দ্রুত আসতে পারলে আরো উপকৃত হবে।
ব্লক কি?
ব্লক হলো নালীর ভিতরের দেয়ালে জমাকৃত ক্লোলেষ্টেরল ফ্যাট ও রক্ত কনিকা যা নালীকে সরু করে দিয়ে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে।
লেখক - ডাঃ মহসীন আহমদ (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)