Healty heart happy feet

Healthy Heart Happy Life Organization (HeLO)

হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো)

Charity, Awareness & Research For Humanity

Tips Details

  • Home
  • /
  • HeLO tips
  • /
  • COVID-19 Tips
  • /
  • করোনা পরিস্থিতিতে অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হলে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় করণীয়

করোনা পরিস্থিতিতে অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হলে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় করণীয়


বর্তমানে সারা বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। আপনার আশেপাশে কে কি করছে তা আপনার দেখার দরকার নেই। আপনার নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য আপনাকে সাবধানে থাকতে হবে, এটাই এখন আপনার একমাত্র করনীয়। ঘরে থাকুন এবং নিরাপদ থাকুন। কম বেশী আগামী ১ বছর আমাদের এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যরা কি ব্যবস্থা নিবেন সেই বিষয়ে আজ কথা বলবো।

 

∗ ঘর থেকে বের হবার সময় পাতলা সুতির পুরাতন ফুল হাতার জামা /পাঞ্জাবী ও একটু লুজ ফিটিং প্যান্ট / পাজামা পড়ে বের হবেন। জিন্স অথবা টাইট ফিটিং ড্রেস না পড়াই ভালো। জুতা ও মোজা অবশ্যই পড়বেন। অবশ্যই সার্বক্ষনিক মাস্ক পড়ে থাকতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়া বাকিরা পিপিই পড়বেন না। গ্লাভস ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কারন, সারাদিন একটা গ্লাভস পড়ে থাকলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। বরং সাথে হেক্সিসল অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। রোদ চশমা কিংবা ফেইস শিল্ড ব্যবহার করুন।

∗ পাতলা, লুজ ফিটিং পুরাতন সুতী কাপড় পড়ার কারন, এটি আরামদায়ক এবং লম্বা সময় পরিধান করে থাকলেও ঘামের সমস্যা কম হবে। বাসায় ফিরে গোসল করেই পরিধেয় কাপড় ধুয়ে ফেলা সহজ হবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। নিজের কাজ নিজেই করার অভ্যাস করতে হবে। বাসার বাইরের গৃহকর্মীদের করোনাকালে বাসায় ঢুকতে দিবেন না। এটা আপনার ও পরিবারের জন্য আত্মহত্যার সামিল।

∗ সবাইকে তিন স্তর বিশিষ্ট সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ। কারন কাপড়ের মাস্ক কোন ভাইরাস সুরক্ষা দিতে পারে না অন্যথায় সার্জিকেল মাস্ক ৮০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। সেক্ষেত্রে আমরা ৫ টি মাস্ক বাসায় রাখতে পারি। যত্ন করে ব্যবহার আর সংরক্ষন করলে অনেকদিন রিইউজ করা সম্ভব। ১ম মাস্কটি ব্যবহারের পরে না ধুয়ে একটি পলিথিনে ভরে বারান্দায় ঝুলিয়ে রেখে দিবেন। এর পর ২য়টি ব্যবহার করবেন, এভাবে ১ম টি আবার ৬ষ্ঠ দিনে ব্যবহার করবেন। কিন্তু কোন কারনে ছিড়ে গেলে একটি বদ্ধ ডাষ্টবিনে ফেলে দিবেন। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক নামিয়ে কথা বলেন। সেটা কোনভাবেই করা যাবে না। মাস্কের সামনের অংশে হাত দেয়া যাবে না, এতে ইনফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের জরুরী প্রয়োজনে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতে হয়, তারা বাসায়ও মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়। এতে বাসার অন্য সদস্যরা নিরাপদ থাকবে।

∗ বাংলাদেশে সার্জিকেল মাস্ক অপ্রতুল বিধায় সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে এর সরবরাহ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যরা ঘরে তৈরী সুতির সাধারন মাস্ক পড়বেন। মাস্ক একটু বড় আকারের বানাবেন যাতে চোখের নীচ থেকে থুতনি পর্যম্ত আবৃত থাকে। মাস্কের সামনের অংশে কোনভাবেই স্পর্শ করা যাবে না। মাস্ক প্রতিদিন বাসায় ফিরে মাস্ক ধুয়ে ফেলবেন। যাদের জরুরী প্রয়োজনে নিয়মিত বের হতে হয়, তারা বাসায়ও মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়। এতে বাসার অন্য সদস্যরা নিরাপদ থাকবে।

∗ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া আর কারো পিপিই পড়ার প্রয়োজন নেই। পিপিই পড়ে শুধুমাত্র একটা রুমে অথবা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থাকতে হবে। পিপিই পড়ে খাওয়া দাওয়া এমন কি টয়লেট করা যাবে না। চিকিৎসকরাও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে পিপিই পড়ে বের হবেন না। পিপিই নির্ধারিত এলাকায় খুলে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এলাকা ত্যাগ করবেন। রাস্তা ঘাটে পিপিই পরা অপরাধ, এতে আপনি প্রকারান্তরে অন্যের ক্ষতি করছেন। পুরো পিপিই একটা ইনফেক্টেড বোমার মতো। এটা পড়ে হয়তো আপনি সুরক্ষিত, কিন্তু আপনার আসেপাশের সবাই অরক্ষিত, এটা মনে রাখবেন। বাসায় এটা পড়ে এলে অন্যরা সহজেই ইনফেক্টেড হয়ে যাবে। এটা খোলার সময়ে আপনি নিজেও ইনফেক্টেড হতে পারেন।
পিপিই ব্যবহারের ট্রেইনিং এর অভাবই চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের একসাথে ইনফেক্টেড হওয়ার প্রধান কারন।

∗ গ্লাভস ব্যবহার করে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী। একটি গবেষনায় দেখা গেছে মানুষ প্রতি ঘন্টায় ২৫ বার মুখের বিভিন্ন অংশে হাত দেয়। গ্লাভস পরে আপনি মুখের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিলে ইনফেক্টেড হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে বার বার গ্লাভস পরিবর্তন করতে হবে। গ্লাভস না পড়লে আপনি বার বার হাত পরিষ্কার করবেন, সেটাই শ্রেয়। দরজা, লিফটের বাটন, বৈদ্যুতিক সুইচ ধরার সময় হাতের কনুই ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে।

∗ হাত ধোয়া কিংবা পরিষ্কারের বিকল্প নেই। সারাদিন বার বার সাবান দিয়ে কমপক্ষে ৪০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। পানি ও সাবান না থাকলে হেক্সিসল অথবা হ্যন্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিক সহ যারা রাস্তাঘাটে পাবলিক সার্ভিসের কাজ করেন, তাদেরকে পিপিই কিংবা গ্লাভস না দিয়ে পর্যাপ্ত মাস্ক, হেক্সিসল / হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা প্রয়োজন। তারা প্রতি ঘন্টায় নিয়মিত ৪ বার হাত পরিষ্কার করবে। ইনফেক্টেড জায়গা স্পর্শের সন্দেহ হলেই সাথে সাথে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

∗ সবাইকে জুতা ও মোজা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ঘরে ঢুকার আগে জুতার তলা অবশ্যই ব্লিচিং পাউডারের পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মোজা প্রতিদিন ধুতে হবে।

∗ বাইরে বের হওয়ার সময় রোদ চশমা কিংবা ফেইস শিল্ড ব্যবহার করবেন। কারন চোখের ভিতর দিয়ে কিন্তু ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

∗ বাইরে বের হলে ৬ ফুট শারিরীক দুরত্ব বজায় রাখা উত্তম, কমপক্ষে ৩ ফুট দুরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। তাই গনপরিবহন পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। বাংলাদেশে শহরগুলো খুব ছোট, খুব সহজেই হেঁটে চলাচল করা সম্ভব। তাই, হাঁটার অভ্যাস করুন, শরীর আর মন দুটোই ভালো থাকবে। প্রয়োজনে সাইকেল বা নিজস্ব বাহন ব্যবহার করবেন। আপনার প্রাইভেট গাড়ীর ড্রাইভার থেকেও আপনি ইনফেক্টেড হতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজে ড্রাইভ করুন অথবা ড্রাইভারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। রাস্তাঘাটে, অফিসে, বাজারে মানুষ আপনার ঘাড়ে এসে পড়তে পারে, আপনি নিজ দায়িত্বে ৩-৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন। বাজার খোলা জায়গায় করা ভালো। কারন, বদ্ধ সুপার শপে এসি থেকে ইনফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যথাসম্ভব ভীড় এড়িয়ে চলবেন। সেলুনে চুল কাটাবেন না, বাসায় নিজে অথবা অন্যের সাহায্যে চুল কাটাবেন।

∗ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে কোন হোটেলে খাবার খাবেন না। সাথে পানি ও শুকনো বিস্কুট রাখতে পারেন।

∗ ধাতব বস্তু যেমন ঘড়ি,চেইন, ব্রেসলেট ইত্যাদি পড়ে বাইরে যাবেন না। কারন ধাতব বস্তুতে ভাইরাস অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে। আর মোবাইল ফোন যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না। মোবাইল ফোন থেকেও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে ফোনটিকে একটি প্লাষ্টিক আবরনের ভিতরে রাখুন। বাসায় ফিরে প্লাষ্টিক আবরনটিকে বন্ধ ডাষ্টবিনে ফেলে দিন। টাকা- পয়সা ধরার পরেই খুব ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

∗ বাসায় ফিরে জুতার তলা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে সরাসরি বাথরুমে চলে যাবেন। কাপড় খুলে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুবেন। তারপর কাপড় ধুয়ে গোসল সেরে ঘরে প্রবেশ করবেন। বাসায় বয়ষ্ক ডায়াবেটিস, হার্ট, কিডনী সহ অন্যান্য রোগে অসুস্থ রোগীদের রুমে না যাওয়া উত্তম। আর যাদের নিয়মিত জরুরী কাজে বাইরে যেতে হয়, তাদের বাসায় মাস্ক ব্যবহার ও আলাদা কক্ষে থাকাটা উত্তম।
করোনার সংগেই আমাদের সবাইকে বসবাস করতে হবে।বিশ্বের ৮০ ভাগ মানুষ ইনফেক্টেড হয়ে গেলে, অথবা সার্থক ভ্যক্সিন আবিষ্কার হলে তবেই করোনাকে মানুষ জয় করতে পারবে। যুগে যুগে মানুষের জয় হয়েছে সবসময়। একসময় করোনা ভাইরাসও সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জার মত টিকে থাকবে। কিন্তু, ততোদিনে অনেক মুল্যবান প্রানের বিনাশ হবে।
শুধুমাত্র নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিয়মিত মাস্কের ব্যবহার ও ন্যুনতম ৩ ফূট শারিরীক দুরত্ব বজায় রাখাই হবে করোনার মত বায়ুবাহিত ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচার সহজতম উপায়।

লেখক - ডাঃ মহসীন আহমদ (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)

সহযোগী অধ্যাপক
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক, হেলদি হার্ট হেপী লাইফ অর্গানাইজেশন।